১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে ৭জন বীর মুক্তিযুদ্ধাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীর শ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয় তাদের অন্যতম হলেন বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান। মতিউর রহমান ১৯৬১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের শুরুতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মতিউর রহমান সপরিবারে ঢাকায় দুই মাসের ছুটিতে আসেন। ২৫শে মার্চ কালরাতে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট থাকলেও দেশপ্রেমে আকুল হয়ে অসীম ঝুঁকি ও সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করতে আসা বাঙালি যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খুললেন৷
১৯৭১ সালের ৯ই মে মতিউর রহমান ছুটি শেষ করে নিজ কর্মস্থল পাকিস্তানের করাচি ফিরে যান ৷ সেখানে ফিরে তিনি জঙ্গি বিমান দখল এবং সেটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনানুসারে ১৯৭১ সালের ২০ই আগষ্ট টি-৩৩ নামক যুদ্ধবিমানটি শিক্ষানবীশ একজন পাইলটের উড্ডয়নের সময় রানওয়ে থেকে ছিনতাই করার চেষ্টা করেন। তিনি পরিকল্পনা করেন যে, পাইলট কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে উড্ডয়নের ক্লিয়ারেন্স পেলে তখন তিনি তার কাছ থেকে বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সোজা বাংলাদেশের আকাশে উড়াল দিবেন। পরিকল্পনা অনুসারে একজন সেফটি অফিসার হিসেবে তিনি রানওয়েতে অবস্থান নেন। কন্ট্রোল টাওয়ার ক্লিয়ারেন্সের পর পাইলট বিমানটি নিয়ে রানওয়েতে উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিলে তিনি সেফটি অফিসারের ক্ষমতাবলে বিমানটি থামাতে বলে ককপিটে চড়ে বসেন এবং পাইলটকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে ফেলেন। কিন্তু ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি! জ্ঞান হারানোর আগে পাইলট কন্ট্রোল রুমে জানাতে সক্ষম হন। প্রায় ভারতের সীমান্তে পৌঁছানোর পর তিনি টি-৩৩ যুদ্ধবিমানটিসহ তিনি বিধ্বস্ত হন। তার মৃতদেহ ঘটনাস্থল হতে প্রায় আধ মাইল দূরে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সরকার মতিউর রহমানকে তার সাহসী ভূমিকার জন্য বীর শ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে ।