প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে। সৌরজগৎ গঠনের সময়েই অনেক গ্রহ লোহায় সমৃদ্ধ হয়েছে। আর লোহার গঠন হয়েছে মৃত নক্ষত্রগুলোর বুকে। এরপর গ্যাস ও ধুলার মেঘের সঙ্গে ঘূর্ণিপাক খেতে খেতে একসময় মহাকর্ষজ বলের প্রভাবে সূর্য এবং গ্রহগুলো গঠনে সাহায্য করে। আমাদের পৃথিবীর ক্ষেত্রে লোহাগুলো জমা হয়েছে এর কেন্দ্রে। নাসার বিজ্ঞানীদের ধারণা, মঙ্গলের কেন্দ্রেও লোহা আছে, তবে পরিমাণে অঢেল হওয়ায় গ্রহটির পৃষ্ঠেও লোহার একটি আবরণ তৈরি হয়েছে। সে কারণেই লাল দেখায়।
আর সেই লাল মাটির স্পর্শ পেতেই গত বছর ২৩ জুলাইয়ে লাল গ্রহের উদ্দেশে রওনা হয় চিনের মঙ্গলযান ‘তিয়ানওয়েন-১’ (Tianwen-1)। চিনের মঙ্গলযানের দুটি অংশ। একটি হল মঙ্গল গ্রহকে কেন্দ্র করে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করা অরবিটার। অন্যদিকে সেই অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ করেছে ল্যান্ডার। সেই ল্যান্ডারের সঙ্গেই যুক্ত রোভার ‘ঝুরং'(Zhurong)। চিনা পুরাণ অনুসারে ঝুরং আগুনের দেবতা। শনিবার সকালে ঝুরং মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করেছে বলে জানায় চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশানাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (CNSA) । চিনের অতি শক্তিশালী ‘লং মার্চ ফাইভ বি’ রকেটের মাধ্যমে তিয়ানওয়েন-১-এর উত্ক্ষেপণ করা হয়। এ জাতীয় অভিযানে লিফট অফ-এর পর অবতরণের মুহূর্তটিকেই সবচেয়ে কঠিন বলে মনে করা হয়। সেই শেষ মুহূর্তের আতঙ্ক কাটিয়ে সাফল্যের খবর দেয় সিএনএসএ। বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসাবে তারা লাল গ্রহে রোভার অবতরণ করালো। চিনের মহাকাশ গবেষকরা এখনও সরকারিভাবে ঠিক কখন এবং কোথায় মঙ্গলের মাটি ছুঁয়েছে তারা, তা জানায়নি। তবে সূত্র মতে, চিনের স্থানীয় সময় অনুসারে শুক্রবার (১৪ মে) সন্ধ্যা ৭ টা বেজে ১১ মিনিট নাগাদ তারা লাল গ্রহে পৌঁছেছে।চিনের এই মঙ্গল অভিযানের নাম ‘নিহাও মার্স’। এর ইংরাজি তর্জমা ‘হ্যালো মার্স’ ।
চিনের অতি শক্তিশালী ‘লং মার্চ ফাইভ বি’ রকেটের মাধ্যমে তিয়ানওয়েন-১-এর উত্ক্ষেপণ করা হয়। প্রায় পাঁচ টন এই বিশালাকার রকেটের সঙ্গেই যুক্ত ছিল অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভার। আগামী ৯০ মঙ্গল দিবস লাল গ্রহের মাটিতে ঘুরে বেরাবে রোভার ঝুরং। নমুনা সংগ্রহ, মঙ্গলপৃষ্ঠের গঠন খতিয়ে দেখা, বরফের সন্ধান হল এই অভিযানের মূল লক্ষ্য।