তানু: বাড়ি কবে যাচ্ছ?
-হ্যা।
সজিব : (কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল) কালকে যাবো।
তানু:-টিকিট কেটেছ?
তানুর কথায় সজিব একটু নড়েচড়ে বসল। কি বলবে ভাবছে..মিথ্যা কথা বলবে নাকি সত্য কথা বলবে! সত্য কথা বললে তানু অনেক কথা শুনাবে। তানু সবসময় সজিবকে শাসনের উপর রাখে, সজিবের বেখেয়ালি আচরণের জন্য নিয়মিত বকা খায়। সজিব আমতা আমতা করে বলল- না! মানে..
-তারমানে টিকিট কাটোনি! বাড়ি যাবে কিভাবে?
-সমস্যা নেই। কালকে টিকিট কেটে ফেলব।
-দেখ, সমস্যা যেন না হয়।
-না, সমস্যা হবে না।
-শপিং করেছ?
সজিব এবারে চিন্তায় পরে গেল। সজিব শপিং এর জন্য টাকা জমিয়ে রেখেছিল কিন্তু কেনা হয়নি। হাত খরচের টাকা বাকি রেখে বাকিটা বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় মা এবং ছোটবোনের জন্য। নিজে কষ্ট করে চলে। মাঝে মাঝে সে না খেয়ে থাকে। ছোট বোন ঈদে জামা চেয়েছে। তাই নিজের জন্য শপিং না করে বাড়িতে টাকা দেওয়া ভাল মনে হয়েছে। তাই সেটাই করেছ। আজ ছোটবোনটার কথা খুব মনে পরছে। ছোট বোনটা এভাবেই ঈদের আগে অপেক্ষা করে তাকে জামা কিনে দেওয়ার জন্য।
-কি ভাবছ এতক্ষণ ধরে ?
তানুর কথায় বাস্তবে আসল সজিব, মুচকি হেসে বলল -না।
তানু ক্ষিণ রেগে বলল- কেন?
-শপিং মলে এত ভিড়! এর মধ্যে শপিং!
-ও….!
-তুমি কেনাকাটা করেছ?
-বাসায় যাবেনা?
-হ্যা। বাসায় যেতে হবে।
সজিব উঠল। তানুও তার সাথে উঠল। তানুর সাথে ঠিক দেখা করা হয় না। সময় হয়ে ওঠেনা। আজ বিকেলে সজিব একটু সময় পেয়েছে, তাই দেখা করতে পেরেছে। মেসে ঢুকে হাহাকার লাগে। পুরো মেসে মাত্র কয়েকজন লোক আছে। বাকি সবাই চলে গিয়েছে। সজিব’ও চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তার টিউশনির কারনে যাওয়া হয়নি। ইচ্ছা করে এই টিউশানি ছেড়ে দিতে, কিন্তু টিউশনি ছাড়লে বাবার উপর বেশি জুলুম করা হবে। মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা কষ্ট হলেও সেটা প্রকাশ করবে না, কিন্তু পরিবারের খরচ চালিয়ে তাদের পড়াশুনা চালাতেই অনেক কষ্ট হয়।
সজিব মাত্র বাসায় ফিরল। সজিবের মা ফোন দিয়েছে। ফোন ধরে বলল… -মা কেমন আছ?
-ভাল আছি। তুই বাড়ি আসবি কবে?
-কাল পরশু চলে আসব।
মা ছেলের আলাপন শেষে দেখা যায় রাত দশটা বাজে। সজিব ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে। কালকে সে বাড়ি যাবে। তানু সজিবকে ফোন দিয়ে চলেছে। ব্যাগ গুছানো বন্ধ করে ফোন রিসিভ করল। তানু ওপাশ থেকে অভিমানের সুরে বলল- ফোন দেওয়ার কথা ছিল। ফোন দাওনি কেন?
সজিব মুচকি হেসে আস্তে করে বলল- সরি।
-ঠিক আছে, কি করছিলে?
-ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছি।
-কাল কয়টায় যাচ্ছ?
-দশটার দিকে।
-একটু পরে গেলে হয়না?
-১১টার দিকে যাও দেখা করে?
-আচ্ছা।
বেলা সারে দশটা। সজিব তানুর জন্য ষ্টেশন এ অপেক্ষা করছে। তানুর আসার কোন নাম নেই। হঠাৎ পিছন থেকে তানু বলল- চলে এসেছি।
-কোথায় যেতে হবে বল।
-কোথাও না। যাওয়ার আগে দেখা করতে চাইলাম।
-ওহ। এখন যেতে পার।
-আচ্ছা। আমি বাসে উঠে ফোন দিব।
-দাড়াও….. সজিব দাঁড়াল।
তানু ব্যাগ থেকে একটা টিকিট বের করল। সজিব টিকিট দেখে বলল- তুমিও যাবে নাকি?
-আরে না।
-তবে টিকিট দিয়ে কি করবে?
-আরে পাগল। এটা তোমার টিকিট।
-আ মা র…… ?
-হ্যা। আমি জানতাম। তুমি টিকিট কাটতে পারনি।
সজিব কিছু বলল না। চুপচাপ তানুর হাত থেকে টিকিট নিল। হেটে এগোতে গিয়ে আবার দাঁড়াল। তার এখন তাড়া নেই। টিকিট কাটতে গেলে যে সময় ব্যায় হত। সেটুকু তানুর সাথে ব্যায় করলেও হবে। সজিব নিপার দিকে তাকিয়ে বলল- চল ওদিকটায় বসি। -তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে না? -বাস আসতে অনেক দেরি। তানু হাসল। সজিব সাথে তাল মিলিয়ে হাসল। তানুর হাতটা ধরে দাড়িয়ে আছে। এখন তাড়া নেই। টিকিট পেয়েছে! ভালবাসার মানুষটার সাথে আরেকটু সময় থাকলে ক্ষতি কী…! এভাবেই চলতে থাকে তাদের প্রতিনিয়ত জীবন…