দফায় দফায় লকডাউন শেষ হওয়ার পর ১লা জুলাই থেকে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। বন্ধ হয়ে আছে অতি জরুরি সেবা ছাড়া সবই। উচ্চবিত্তদের জন্য অর্থাগার তথা ব্যাংক খোলা থাকলেও মধ্যবিত্তদের সকল উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে আছে।
নিম্নবিত্তের জন্য সরকারি ও বেসরকারি অনুদান ও ত্রাণের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে দাঁড়ানোর পথ খোলা নেই মধ্যবিত্তদের জন্য। কেননা মধ্যবিত্তদের অবস্থান মাঝখানে থাকায় না পারে নিচে নামতে, না পারে উপরে উঠতে। তাই মধ্যবিত্তদের বড় একটি অংশই অসহায়। সীমিত আয়ে হিসেবে-নিকেশ কষে জীবন যাপন করা এদের না আছে সঞ্চয়। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে মাত্র আট-দশদিন আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হলেই নেমে আসে চরম দুর্দশা। গতবারের মতো লকডাউনে এই শ্রেণিটি এবারও চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
সমাজের সবচেয়ে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করতে হয় নিম্নবিত্ত বা উচ্চবিত্ত নয়, সমাজের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে। দফায় দফায় বেড়ে উঠা লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণিটি হচ্ছে মধ্যবিত্ত। ১৬ কোটি মানুষের বাঙলায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি পরিবার আছে এবং তারমধ্যে নিম্নবিত্ত ২০ ভাগ আর উচ্চবিত্ত ২০ ভাগ৷ মাঝের যে ৬০ ভাগ এরা নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্য মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত এই তিন শ্রেণির মধ্যবিত্ত নামে পরিচিত৷ তবে এককথায় এদের বলা যায় সমাজের অবহেলিত। কেননা, নিম্নস্তরের মানুষের জন্য আছে সহযোগিতার হাত এবং উচ্চশ্রেণির জন্য আছে সঞ্চয় ও অগাধ অর্থকড়ি। কিন্তু চক্ষুলজ্জার কারণে মধ্যবিত্তেরা না চাইতে পারে মানুষের কাছে সাহায্য সহযোগিতা, না পারে ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর মতে- করোনায় ফর্মাল সেক্টরে কাজ করা ১৩ শতাংশ মানুষ চাকরি হরিয়েছেন। যাদের আয় ১১ হাজার টাকার কম, তাদের ৫৬.৮৯ শতাংশ পরিবারের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, ৩২.১২ শতাংশের আয় কমে গেছে। যাদের আয় ১৫ হাজার টাকার মধ্যে তাদের ২৩.২ শতাংশের আয় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ৪৭.২৬ শতাংশের আয় কমে গেছে। আর যাদের আয় ৩০ হাজার টাকার বেশি তাদের ৩৯.৪ শতাংশের কমেছে এবং ৬.৪৬ শতাংশের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। মধ্যবিত্তের ওপর করোনার অভিঘাত কতটা স্পষ্ট এই জরিপ সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
এমন মানবেতর পরিস্থিতি সামাল দিতে লকডাউনে শ্রমজীবী মানুষ ও মধ্যবিত্তদের এখনই রেশনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) অংশের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডা. এম এ সামাদ। তিনি বলেন, না হলে করোনা থেকে বাঁচলেও মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।