আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে নকশিকাঁথা। এক একটি নকশিকাঁথা যেনো আমাদের গ্রাম্য মহিলাদের জীবনের আত্মকাহিনী। এ যেন লোকায়ত শিল্পদর্শনের মূর্তপ্রতীক। কাঁথা অতি সাধারণ উপাদানে তৈরি এ দেশের কারুশিল্পীদের অনবদ্য সৃষ্টি। অনুপম শিল্পমাধুর্যের বাস্তব রূপ নকশিকাঁথা। কাঁথার সঙ্গে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। এ দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ব্যবহূত উত্পাদিত শিল্পপণ্যের মাঝে নকশিকাঁথা অন্যতম। আমাদের দেশে এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কাঁথার ব্যবহার নেই। কাঁথা শব্দের অভিধানিক অর্থ ‘জীর্ণ বস্ত্রে প্রস্তুত শোয়ার সময়ে গায়ে দেয়ার মোটা শীতবস্ত্রবিশেষ’। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি কাঁথা, কেতা, কাতা এবং খেতা নামেও পরিচিত। সুনিপুণ হাতে সুঁই আর সুতায় গ্রামবাংলার বধূ-কন্যাদের মনের মাধুরী মেশানো রঙ দিয়ে নান্দনিক রূপ-রস ও বর্ণ-বৈচিত্র্যে ভরা যে কাঁথা, তাই নকশিকাঁথা। নকশিকাঁথায় আমরা প্রতিনিয়ত খুঁজে পাই আমাদের শিল্প, সংস্কৃতি, সমাজ-সভ্যতা, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, গৌরবগাথা ও সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। নকশিকাঁথায় এ দেশের গ্রামীণ নারীদের লোকায়ত ভাবনা, আবেগ আর কল্পনার আরেক রূপ যেন সূচিকর্মের মাঝ দিয়ে মূর্ত প্রকাশ ঘটছে। গ্রামীণ লোকসংস্কৃতির প্রবাহিত ধারায় তাইতো দেখা যায় নানা নকশাসমৃদ্ধ নকশিকাঁথা এবং কাঁথা নকশা অঙ্কিত বহুবিধ পণ্য। এটি মূলত গ্রামীণ মহিলাদের শিল্পকর্ম হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। নকশিকাঁথা শিল্পের সঙ্গে আমাদের আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডও জড়িয়ে আছে নিবিড়ভাবে।